Quantcast
Channel: NSSB
Viewing all articles
Browse latest Browse all 364

লাউয়াছড়ায় ঝুঁকিতে জীববৈচিত্র্য

$
0
0

জাতীয় উদ্যানের বুক চিরে চলে গেছে রেললাইন। ছবি : কালের কণ্ঠ

আরিফুর রহমান   ১১ মার্চ, ২০১৭

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান। অস্কার পুরস্কার পাওয়া হলিউডের ছবি ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ’-এর একটি অংশের শুটিং হয়েছিল এই উদ্যানে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুক, আফ্রিকার বিরল প্রজাতির গাছ টিকওকের দেখা মেলে এক হাজার ২৫০ হেক্টরের এই বনে। তবে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পাওয়া লাউয়াছড়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। এ জন্য বনের ভেতরে রেললাইন, সড়ক এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসতি ও পর্যটকদের ভিড়কে দায়ী করা হয়েছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বনের ভেতর থেকে রেললাইন, সড়ক ও জনবসতি সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

বন কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে গোয়েন্দা সংস্থাটি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পরিদর্শন শেষে সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের জন্য কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রেলপথে কাটা পড়ে আর সড়কে গাড়িচাপা পড়ে বন্য প্রাণী মারা পড়ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাসিয়া নৃগোষ্ঠীর লোকজন বনের ওপর নির্ভরশীল। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা শূকর, হরিণসহ নানা ধরনের বন্য প্রাণী শিকার করে; জ্বালানির জন্য গাছ কাটে। বনের ভেতর দোতলা-তিনতলা ভবনও নির্মাণ করেছে তারা। বনের ভেতর পান চাষের জন্য সূর্যের রশ্মি পেতে গাছের ডালপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। রাতে টিভি, রেডিও, জেনারেটর চালানোয় বন্য প্রাণীর সমস্যা হচ্ছে। এতে কমছে বন্য প্রাণী ও প্রাকৃতিক সম্পদ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বনের ভেতর বন্য প্রাণীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে দেশ-বিদেশ থেকে যাওয়া পর্যটকরা। খাসিয়াপুঞ্জিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার পর থেকে রাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। এতে বন্য প্রাণীর জীবন ও চলাচল সংকুচিত হয়ে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় উদ্যানের ঠিক মাঝখানে একটি ডাকবাংলো এবং পূর্বাংশে একটি ডরমিটরি আছে। সেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা রাতে থাকায় বন্য প্রাণীর চলাচল, বসবাস ও বংশবিস্তার মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের যানবাহন নিয়ে উদ্যানে ঢুকে দিনভর খাওয়াদাওয়া, মাইক ব্যবহার করায় বন্য প্রাণীর বসবাস ও স্বাভাবিক চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ছে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাঁচাতে রেললাইন ও সড়কের রুট উদ্যানের উত্তরে কিংবা দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, খাসিয়াদের সীমান্তবর্তী কোনো খাসজমি বা টিলায় জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসন করা যেতে পারে। প্রতিবেদনে সহব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) নিসর্গ নামক এনজিওর কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে সরকারকে। বন্য প্রাণীর নিরবচ্ছিন্ন জীবনযাপন ও ভবিষ্যৎ বংশবৃদ্ধির স্বার্থে বন বিভাগ পরিচালিত ডাকবাংলোটি জাতীয় উদ্যানের মাঝখান থেকে সরিয়ে এক পাশে নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে এখন বন্য প্রাণীর যে সাতটি অভয়ারণ্য এবং ১০টি জাতীয় উদ্যান আছে, তার মধ্যে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া অন্যতম। এই জাতীয় উদ্যানের মাঝখান দিয়েই ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা হয়েছিল ঢাকা-সিলেট রেলপথ। একই সঙ্গে শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জে যাতায়াতের জন্য বনের ভেতর দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বনের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলার সময় প্রায়ই রেললাইনে কাটা পড়ে মারা যায় বন্য প্রাণী। নতুন সড়ক নির্মাণের পর থেকে যানবাহনের নিচে চাপা পড়েও বন্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। এক মাসে ১০টি বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার রেকর্ডও রয়েছে বন বিভাগের কাছে।

গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা হয় প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) হিসেবে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া সফিউল আলম চৌধুরী এবং বিদায়ী সিসিএফ ইউনূস আলীর সঙ্গে। দুজনেই মনে করেন, উদ্যানের ভেতর যে সড়কটি আছে, সেটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া জরুরি। খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে অন্য কোথাও পুনর্বাসন করতে হবে। তবে বনের ভেতর দিয়ে রেলের যে রুট রয়েছে, সেটি সরিয়ে ফেলার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে তাঁরা বলেন, রেললাইন সরানো ঠিক হবে না। কারণ মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় মাটির নিচে অনেক গ্যাস আছে। ভবিষ্যতে সেখানে কূপ খনন করতে হতে পারে। তা ছাড়া ওই এলাকার মাটির যে বৈশিষ্ট্য তাতে নতুন করে রেলপথ নির্মাণ করতে খরচ পড়বে অনেক বেশি। এত বিশাল বাজেট পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।

প্রধান বন সংরক্ষক সফিউল আলম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বনের ভেতর দিয়ে তৈরি হওয়া সড়কটি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা একমত হয়েছেন। বনের পাশ দিয়ে আরেকটি সড়ক আছে। তবে সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। সে সড়কটি উপযোগী করে তোলার পর বনের ভেতরের সড়কটি যাতায়াতের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে। ’ খাসিয়াদের অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সফিউল আলম চৌধুরী বলেন, বনের ভেতরে বন্য প্রাণী আর খাসিয়াদের একসঙ্গে থাকা উচিত নয়। তবে খাসিয়াদের সরানোর আগে তাদের বোঝাতে হবে। বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাদের বনের একপাশে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনূস আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি রেললাইন সরানোর পক্ষপাতী নই। এতে অনেক খরচ পড়বে, যেটা বরাদ্দ দেওয়া অসম্ভব। এ ছাড়া ওই অঞ্চলে এখনো অনেক গ্যাস আছে, যার জন্য ভবিষ্যতে কূপ খনন করতে হবে। রুট পরিবর্তন করা অনেক ঝুঁকি। তবে যেটা করা যেতে পারে, সেটা হলো নজরদারি বাড়ানো। সেটি রেলপথ মন্ত্রণালয় করতে পারে। তা ছাড়া রেললাইনের পাশ ধরে বনের যেসব গাছ আছে, সেগুলোর ডালপালা প্রতিনিয়ত কেটে দিতে পারলে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ’

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মিহির কুমার বলেন, বনের ভেতর সড়কে রাতে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। খাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের অন্যত্র পুনর্বাসন করা জরুরি। গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ।

The post লাউয়াছড়ায় ঝুঁকিতে জীববৈচিত্র্য appeared first on NSSB.


Viewing all articles
Browse latest Browse all 364

Trending Articles